বেক্সিমকোর জন্য শাখার ঋণসীমা তুলে নিয়েছিল জনতা ব্যাংক
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপকে অতিরিক্ত ঋণসুবিধা দিতে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া হয় জনতা ব্যাংকের মতিঝিলের স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপককে। ফলে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান খুলে এই শাখা থেকে বেপরোয়া ঋণসুবিধা (ঋণপত্র) নেয় গ্রুপটি। তখন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অনুমোদন করলেও সব ঋণের বিষয়ে জানতে পারেনি পরিচালনা পর্ষদ।
এসব ঋণসুবিধা পরে সরাসরি ঋণে পরিণত হয়। এর অনেকগুলোই আবার খেলাপি হয়ে পড়ে। ফলে এক জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। দেশে এখন সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ জনতা ব্যাংকে।
শুরু থেকে জনতা ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক গ্রুপ হিসেবে দেখত। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তথ্য জমা দিত। গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎপরতায় তা একক গ্রুপভুক্ত করা হয়। এতে সীমা ছাড়িয়ে যায় গ্রুপটির ঋণ।
বেক্সিমকো গ্রুপের সীমার ১৬ গুণ বেশি ঋণ নেওয়ার তথ্য জেনেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীরব ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে গত বছরের আগস্টে বেক্সিমকো গ্রুপকে আর ঋণ দেওয়া যাবে না—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনার পরও গ্রুপটিকে নতুন করে ৩০১ কোটি টাকা দিয়েছে জনতা ব্যাংক। কীভাবে জনতা ব্যাংকের একটি শাখা থেকে বেক্সিমকো গ্রুপ এত টাকা নিয়ে গেল, সে বিষয়ে বিশেষ পরিদর্শন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসব ঋণের অনুমোদন পর্ষদ থেকে দেওয়া হয়নি। আমরা ২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিষয়টা জানতে পারি।
এস এম মাহফুজুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান, জনতা ব্যাংক।
বেক্সিমকো গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত জনতা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সালমান এফ রহমান ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। এ জন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ সবাই তাঁকে খুশি রাখার চেষ্টা করতেন। কেউ পদ পেতে, আবার কেউ পদ ধরে রাখতে তাঁকে নতুন নতুন কোম্পানি খোলার পরামর্শ দিয়ে অর্থায়ন করতেন। একটি কোম্পানির ঋণসীমা শেষ হলে নতুন কোম্পানি খুলে সুবিধা দেওয়া হয়। তথ্য গোপন করতে নতুন কোম্পানির মালিকানায় অন্যদের রাখা হয়। এভাবেই বেক্সিমকোর ঋণ ২৫ হাজার কোটি টাকায় ওঠে।
0 Comments